ডায়বেটিসে অবহেলা বাড়াতে পারে মৃত্যুঝুঁকি!

ডায়াবেটিস যাকে বাংলায় বলা হয় বহুমূত্র রোগ। এটি বিশ্বের বহুল জনশ্রুত এবং প্রভাব বিস্তার করা রোগের মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে প্রায় ৪২ কোটির মত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। এই রোগের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে বিজ্ঞানীরা আজও অজ্ঞাত। তবু তাঁরা অনুমান করে থাকেন যে জিনগত কারনে এই রোগটি হয়ে থাকে। চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক ঠিক কি ঘটে ডায়াবেটিস হলে মানুষের শরীরে।

প্রথমত মানুষের শরীরের মূল শক্তির উৎপাদিত হয় আমাদের খাদ্য উপাদান শর্করা থেকে। এই শর্করা ভেঙ্গে গ্লুকোজে পরিনত হয়। মূলত এই গ্লুকোজগুলোই আমাদের কোষের সাথে মিলিত হয়ে আমাদের শক্তি উৎপন্ন করে থাকে। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগের কারনে পুরো প্রনালীটিই ব্যাহত হয়। ইনসুলিন নামক হরমোন আমরা নিঃসরন করি। এই হরমোনই গ্লুকোজ কে কোষে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। কিন্তু এই রোগের ফলে রোগীর শরীরে ইনসুলিন হরমন আর তৈরি হয় না কিংবা সেটির নিঃসরন পরিমান কমে যায়। এর ফলে এই গ্লুকোজ আমাদের রক্তে মিশে যায় এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বেড়ে যায়। খুব স্বাভাবিক ভাবেই রোগী দূর্বলবোধ করে। পানির পিপাসা বৃদ্ধি পায় এবং ঘন ঘন প্রস্রাব করে থাকে। এছাড়া শরীরের নানান অংগ প্রত্যঙ্গ সহ নানাবিধ সমস্যা শুরু হয়। এর কোন স্থায়ী সমাধান নেই  সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করব।

Insulin in blood

ডায়াবেটিস রোগীর কথা চিন্তা করলে আমরা সাধারনত মধ্য-বয়সি থেকে বৃদ্ধ বয়সী মানুষের চিত্রটাই আমাদের ভেসে উঠে। কিন্তু আদতে চিত্র কিন্তু ভিন্ন। কেননা বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন যে ডায়াবেটিস রোগীর কোন নির্দিষ্ট বয়স সীমা নেই। যে কেউ যখন তখন আক্রান্ত হতে পারেন। কেননা এই রোগ কিভাবে হয় তা জানা এখনো সম্ভব হয় নি। আমি পূর্বেই উল্লেখও করেছি জ্বিনগত কারনেও এই রোগ হতে পারে। সুতরাং যদি আপনার পিতা-মাতার এক কিংবা একাধিকের মাঝে এই রোগ থাকলে আপনার এই রোগ হবার একটি সম্ভাবনা থেকে যায়। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, প্রক্রিয়াজাত খাবার (ফাস্টফুড) কায়িক পরিশ্রম না করা, স্থুলতা, ধুমপান, মদ্যপান সহ নানা রকমের নেশা ইত্যাদি ডায়াবেটিসের ঝুকি বাড়িয়ে তোলে।

আমাদের দেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং দক্ষিন এশিয়ার এই দেশটিতে ডায়াবেটিসকে ধরা হয় সর্বোচ্চ মাত্রার একটি রোগ। ডায়াবেটিস রোগটি ধীরে ধীরে একজন মানুষকে কাবু করে ফেলতে পারে। বলা হয়ে থাকে যে অন্যান্য রোগের সহায়ক হল ডায়াবেটিস। অর্থাৎ হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা, ক্যানসার ইত্যাদি রোগকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে এই ভয়াল ডায়বেটিস। কিন্তু ঠিক ততটুকই আমরা অগ্রাহ্য করি এই ভয়াল বিষয়টিকে। তেমন একটা গা করি না। কারন আমাদের ভেতরে একটা মানসিকতা তৈরি হয়েছে যে নির্দিষ্ট একটা সময়ের পর  এই রোগটা হয়ে থাকে। এর আগে কোন চিন্তা নেই! কিন্তু আমাদের দেশে ২০ – ৩০ বছরের মধ্যেও ডায়বেটিসে আক্রান্ত ব্যাক্তির সংখ্যা নেহাতই কম নয়। এছাড়া গর্ভবতী মহিলারা অত্যন্ত ঝুকিতে থাকেন। কেননা তাদের স্বাভাবিকের থেকে বেশি ইনসুলিন (হরমোন) নিঃসরনের প্রয়োজন পড়ে। তাই আমাদের উচিত ডায়াবেটিস এর ব্যাপারে নিয়মিত চিকিৎসকের কাছ থেকে চেক আপ করিয়ে নেওয়া। যাদের বাবা – মায়ের মাঝে এই রোগ বিদ্যমান তাদের উচিত ৬ মাস অন্তর অন্তর এই চেকাপটি করানো।  আমাদের মাঝে চেকাপের প্রবনতা খুবই কম হয়ে থাকে। কিন্তু যদি পূর্বেই এই রোগটি নির্নয় করা যায় তাহলে খুব ভালোভাবে এটি নিয়ন্ত্রিত করা সম্ভব। আর বর্তমানে রক্তের গ্লুকোজের পরিমান নির্নয়ের মাধ্যমে খুব সহজেই ডায়বেটিস আছে কি নেই বের করা যায়। বাজারে অসংখ্যা গ্লুকোজ মনিটর করার ডিভাইস রয়েছে। আপনি চাইলে নিজেই ডায়বেটিস চেক করতে পারবেন খুব সহজেই। চলুন জেনে নেই ডায়াবেটিস এর কিছু সাধারন লক্ষনসমুহঃ

Diabetes syndrome

ডায়াবেটিসের লক্ষণসমূহ

১. ঘন ঘন প্রস্রাব ও পিপাসা পাওয়া।

৩. বেশি ক্ষুধা পাওয়া

৪. ওজন কমে যাওয়া

৫. শরীরে অবসাদ ও দুর্বলবোধ করা

৬. সহজে ক্ষত না শুকানো, ইত্যাদি।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ৩১ হাজার ৪৬০ জনের মৃত্যু হয়েছিল ডায়াবেটিসের কারনে এবং প্রতিবছর আশংকাজনক হারে এর বৃদ্ধি হচ্ছে। যেখানে অন্যান্য দেশের ৪০ বছর পর থেকে ডায়াবেটিস হবার ঝুকি থাকে সেটা আমাদের দেশে শুরু হয় ২৫ বছর থেকে। এছাড়াও দেশের সর্বোচ্চ মৃত্যুর কয়েকটি কারনের একটি হল এই ডায়াবেটিস  সুতরাং নিয়মিত চেকাপ করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন। এমনকি দেখা যায় লক্ষন প্রকাশ পাওয়া গেলেও অনেকে সেটা গ্রাহ্য করেন না। অনেকক্ষেত্রে অন্যান্য নানাবিধ রোগের প্রাদুর্ভাবের সাথে ডায়াবেটিসও হতে দেখা যায়। কিংবা লাস্ট স্টেজে ধরা পড়ে যেটা চিকিৎসার বাইরে চলে যায়।

তাই আমাদের সকলের উচিত ডায়বেটিসের ব্যাপারে সচেতন হওয়া। নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করা। খাদ্যভাসকে ও ওজনকে নিয়ন্ত্রিত রাখা। আর যাদের এই ভয়াল রোগটি হবার সম্ভাব্যতা রয়েছে তাদের বিশেষভাবে নিজের প্রতি দৃষ্টি রেখে চলা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay in Touch

To follow the best weight loss journeys, success stories and inspirational interviews with the industry's top coaches and specialists. Start changing your life today!

spot_img

Related Articles