কিভাবে রোগ সেরে যায়ঃ সৃষ্টি থেকে মানুষ রোগে আক্রান্ত হয়ে আসছে। যতদিন পৃথিবীতে মানুষ থাকবে ততদিন মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে। কিন্তু রোগের সঠিক কারন বর্ণনা করা চিকিৎসা বিজ্ঞানের পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু প্রতিকারে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা যেমন, আর্য়ুবেধ, ইউনানী, হোমিও, আকু-পাংচার ও সর্বশেষ আধুনিক ড্রাগ থেরাপী সহ শতকেরও বেশী চিকিৎসা পদ্ধতি।

অতি সম্প্রতি বিজ্ঞানিরা রোগের কারন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন যা রোগ নিরাময়ে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। বিজ্ঞানিরা নিশ্চিত করেছেন মানুষের দেহ জীবিত কোষ দিয়ে তৈরি। একটি কোষ (.৬ মাইক্রোন, শুক্রানু ও ডিম্বানুর মিলনের ফলে সৃষ্ট কোষ যা মাতৃ জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত ও বিকশিত হয়েছে) ধারাবাহিক বিভাজনের মাধ্যমে ৫৮ দিনে ৫ মিলি মিটার দৈর্ঘের একটি মানবে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ একটি কোষ থেকেই পুরো মানব দেহের সৃষ্টি হয়েছে। এ আদি কোষটিই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দেহে বেঁচে থাকে। আদি কোষটিই রুপান্তরিত হয়ে বিভিন্ন কার্যকরী কোষ অর্থাৎ কার্যকরী অঙ্গে পরিনত হয় । আদি কোষ ও কার্যকরী কোষ উভয়ই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিভাজিত হয়। কার্যকরী কোষ নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত বিভাজিত হয়। অপর পক্ষে আদি কোষ আজীবন বিভাজিত হয়। কার্যকরী কোষের নির্দিষ্ট জীবনকাল রয়েছে অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় শেষে এদের স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। আদি কোষ এর মৃত্যু নেই। স্বাভাবিক মৃত্যু ও স্বাভাবিক বিভাজন প্রক্রিয়া ব্যহত হলেই দেহ রোগে আক্রান্ত হয়। বিজ্ঞানিরা মানব দেহে আদি কোষ থেকে সৃষ্ট একটি বিশেষ ধরনের কোষ আবিষ্কার করেছেন যেটি মেরুমজ্জা কোষ থেকে সৃষ্টি হয়। এ কোষটিই স্টেমসেল যেটি হার্ট, লিভার, ব্রেইন, ফ্যাট ,স্কিন সহ সব কয়টি অঙ্গ এর কোষে পরিনত হতে পারে। কার্যকরী কোষ (দেহ অঙ্গ কোষ) অকার্যকর হলে এ কোষটিই (স্টেমসেল) সেখানে পুনঃস্থাপিত হয়ে কার্যকরী কোষে পরিনত হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাাথে স্টেমসেলের উৎপাদন ক্ষমতা কমে আসে ফলে দেহ অঙ্গের পুনঃ গঠন ব্যহত হয়। যার ফল স্বরূপ বিভিন্ন অঙ্গের কার্য ক্ষমতা রাস এবং এটিই হাজার হাজার রোগের কারন ও নামকরন।
দেহের সব কোষের (১০০ট্রিলিয়ন) খাদ্য ,খাদ্য গ্রহন পদ্ধতি ও রেচন প্রক্রিয়া অভিন্ন। দেহের প্রতিটি কোষের অভিন্ন প্রান কেন্দ্র আছে যেখানে কোষটির জীবন প্রক্রিয়া লিপিবদ্ধ (জেনিটিক্যাল কোড) আছে। প্রতিটি কোষ একই ধরনের খাদ্য গ্রহন করে। কোষের খাদ্য গুলো হচ্ছেঃ
১) এমাইনোএসিড,
২) ফ্যাটিএসিড,
৩) গ্লুকোজ,
৪) ভিটামিনস,
৫) মিনারেলস ও
৬) পানি।
দেহ কোষ গুলো উক্ত খাদ্য ব্যবহার করে ৪ ধরনের প্রধান প্রানরসায়ন তৈরি করে।
১) লক্ষাধিক প্রোটিন
২) ৬৫ হাজার এনজাইম
৩) শতাধিক হরমোন
৪) বিলিয়ন বিলিয়ন এন্টিবডি।
এ ৪ ধরনের প্রানরসায়ন পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে, সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ের মধ্যে ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ যোগযোগ স্থাপন করে দেহ ব্যবস্থা পরিচালিত করে। প্রতিটি রসায়নের প্রধান উপাদান এমাইনোএসিড। শুধুমাত্র উদ্ভিদ উপরি উক্ত খাদ্য সমূহ প্রস্তুত করে।
কোষ গ্লুকোজ গ্রহন করে ২৫টি রাসায়নিক বিক্রিয়া সংগঠিত করে শক্তি, কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানি তৈরি করে। উৎপন্ন শক্তি ব্যবহার করে, নির্দিষ্ট এমাইনোএসিড সংযুক্ত করে প্রোটিন, হরমোন, এনজাইম ও এন্টিবডি তৈরি করে। ফ্যাটিএসিড, গ্লুকোজ ও এমাইনোএসিড ব্যবহার করে কোষ ও কোষ অঙ্গানু দেহ গঠন করে।
প্রতিটি দেহ কোষের নিজস্ব আত্মরক্ষার কৌশল আছে। আর্থাৎ বর্হিশত্রু ( ব্যকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস ও ক্যামিকেল) দ্বারা আক্রান্ত হলে নিজেরা সম্মিলিত ভাবে প্রতিহত হরে। আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে দেহে যে উপসর্গ তৈরি হয় এটিই রোগ লক্ষন। আক্রমণ প্রতিহত হলে দেহ রোগ মুক্ত হয়, প্রতিহত না হলে রোগাক্রান্ত হয়। দেহ কোষের এ ক্ষমতা নষ্ট হলে প্রাচীন ও আধুনিক কোন চিকিৎসাই কাজে আসে না। দেহ কোষের সব ক্ষমতা ঠিক থাকে সঠিক ও নির্দিষ্ট পরিমান প্রাকৃতিক খাবারে ও কোষের প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনায়।

অথচ নির্মম হলেও সত্যি আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা ও চিকিৎসা পদ্ধতি কোষের প্রাকৃতিক খাবার ও ব্যবস্থাপনা ধ্বংস করে অসুস্থ্য কোষের চিকিৎসার জন্য আধুনিক ড্রাগ ও হাসপাতাল ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ঘটাচ্ছে। অথচ দেহ কোষ আধুনিক ডাক্তার ও ড্রাগ বুঝেনা। শুধুমাত্র কোষের ক্ষমতাকে অটুট রাখার মাধ্যমেই সুস্ব্য ও রোগ মুক্ত জীবন সম্ভব। আধুনিক ড্রাগ ব্যবস্থাপনা রোগের তীব্র অবস্থায় দ্রুত উপশম দিতে সক্ষম। এজন্য রোগগ্রস্তরা আধুনিক ড্রাগের এর শরনাপন্ন হন। অনেক সময় রোগমুক্তি ও ঘটে। রোগের উপশম বা রোগ মুক্তি যাইই ঘটুক না কেন প্রত্যেক ক্ষেত্রেইে কোষের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে মাত্র। একটি আধুনিক ড্রাগ কেমোথেরাপীর কার্য ক্ষমতা বিশ্লেষণ করলে ড্রাগের যাদুকরী ক্ষমতার উৎস বুঝা যায়।
কেমোথেরাপী হচ্ছে অনেকগুলো ক্যামিকেল ড্রাগের প্রোটোকল। ক্যামোথেরাপীতে ব্যবহৃত প্রতিটি ক্যামিকেল বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কোষের মৃত্যু ঘটায়। এর প্রভাবে স্বাভাবিক কোষ ও ক্যান্সার কোষ উভয়েরই মৃত্যু ঘটে। ক্যামোথেরাপীর আক্রমন থেকে বেঁচে যাওয়া কোষগুলো দ্রুত বিভাজন ঘটিয়ে দেহের ক্ষয় পূরন করে। কোষের দ্রুত বিভাজন ক্ষমতা লোপ পেলে ক্যামোথেরাপী অসফল হয়, ক্ষমতা অটুট থাকলে ক্যামো সফল হয়। আধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত ক্যামোথেরাপী ,দেহ কোষের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্যান্সার চিকিৎসার কৃতিত্ব ছিনিয়ে নিয়ে শত বিলিয়ন ডলারের চিকিৎসা বানিজ্য গড়ে তুলেছে। এটি একটি উদাহরন মাত্র এভাবে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে মানব কোষ দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
সঠিক কোষিয় খাবার ও প্রাকৃতিক পরিচর্যার মাধ্যমেই কোষ কে যেকোন রোগ মুক্ত রাখার চিকিৎসা কৌশল চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন যুগের সুচনা করেছে।
ড.শিবেন্দ্র কর্মকার,
Doctorate & Ph. D in Natural Medicine, USA